
বিমান কর্মচারী ফয়েজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা
- আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ১১:৩৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ১১:৩৬:৫৯ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ বিমানের অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ সার্ভিস বিভাগ। সেই বিভাগের ট্রাফিক সেকশনে চাকরি করেন ফয়েজ চৌধুরী সুমন। এই চাকরিতে যোগদানের পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুমনকে। সুমন পেয়েছে আলাদ্বীনের চেরাগ।
বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মরত আছেন তিনি। বিমানের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজের সুবাদে অতিরিক্ত অবৈধ অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টের ভেতরে এবং বায়রে শুধু অপরাধের জন্যই তৈরি করেছে কয়েকটি চক্র। এ সময় এই অবৈধ অর্থ ফয়েজ চৌধুরী সুমনকে আরো হিংস্র ও বেপরোয়া করে তুলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক জনতা পত্রিকার উত্তরা প্রতিনিধি এবং এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার এইচআর হাবিবের উপর মব সৃষ্টি করে টিমের উপর হামলা চালায়। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণখান থানায় হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে একটি ফৌজদারি মামলা করেন। যার নম্বর-১৯।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, এশিয়ান টেলিভিশনের একটি অনুসন্ধানী ইউনিট নিয়ে ফয়েজ চৌধুরী সুমনের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর মাদ্রাসা এলাকায় যান। সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ শুরু করা মাত্রই সুমনের লোকেরা আক্রমণ শুধু করে। প্রথমে ফোন কেড়ে নিয়ে মাথায় আঘাত করে ফোন ভেঙে ফেলে এবং এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থেকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হাবিব জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ওসি গ্রেফতার চেষ্টার কথা বললেও আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। গ্রেফতারে পুলিশের নামে মাত্র অভিযান চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আসামিদের আগেই মামলার খবর দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। অন্যদিকে সুমন সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধি অনেকের সাথে কথা বলে তার অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর খোঁজখবর পায়।
এ বিষয়ে বিমানের কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্রাফিকে যারা কাজ করেন তারা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। আমাদের এখানেও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে তাদের জন্য কিছুদিন পর পর বিমানের এতো বদনাম। লাগেজ কাটা, গোল্ড চোরাচালান এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মচারী বলেন, এখানে যারা ডিউটিতে থাকে তাদের মধ্যে কেউ কেউ এসবের কারিগর। বিদেশ থেকে আনা মানুষের কষ্টের অর্জন যখন এরা লুটে নেয় তখন আর কাউকে কিছু বলার থাকে না। মাঝে মধ্যেই দেখি মানুষের আহাজারি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এয়ারপোর্টের পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় উত্তরার দক্ষিণখান থানায় বসবাস শুরু করেন ফয়েজ চৌধুরী সুমন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের সাথে নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই অবৈধ অর্থ আয় করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যান তিনি। কিনতে শুরু করে এই এলাকার বিভিন্ন রোডে বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দক্ষিণখানের কসাইবাড়ী রেলগেইট, চৈতী গার্মেন্টস এলাকায় ফ্ল্যাট, গাওয়াইর মাদ্রাসার পাশে, মোল্লারটেক হাওয়াই রোড, গাজীপুর, পূর্বাচলসহ আরো কয়েকটি এলাকায় রয়েছে তার বাড়ি ও ফ্ল্যাট।
বিমানের আরেক কর্মকর্তা জানান, আমরা জানি দক্ষিণখান এলাকায় তার নিজের বাড়ি আছে সেখানেই থাকে সে। তবে এতোগুলো প্লট ও বাড়ি আছে এটা আমার জানা ছিল না। আমি ভাড়া বাড়িতে থাকি, বাচ্চাদের স্কুলের খরচ দিতেই হিমশিম খেয়ে যাই। তারা এতো টাকা কোথায় পায় আল্লাহ ভালো জানেন।
তার বসবাস এলাকার কথা বলে আরো জানা যায়, তার স্ত্রী লিজা আক্তার দাপটের সাথে বলে বেড়ায় তাদের হাত অনেক লম্বা এবং বিমানের অনেক উপরের কর্মকর্তার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে। তারা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারেন। লিজা আক্তারের বড় ভাই গোলাম ফারুক সোহাগকে প্রায় সৌদি ও দুবাই যেতে দেখা যায় এবং সেখন থেকেই সুমনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট পরিচালনা করে বলে জানান এলাকাবাসী। এসকল অভিযোগের বিষয়ে ফয়েজ চৌধুরী সুমনের নিকট জানলে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সার্ভিসের আলাদা আলাদা আরো কয়েকটি বিভাগ আছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি সে কোথায় কর্মরত আছে। আর তার বিষয়ে এসব অভিযোগ আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানতে পারলাম। এ বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর বলেন, যদি তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পায় তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বাংলাদেশ বিমানের কর্মচারীদের একটি অংশ কলুষিত করে যাচ্ছে ক্রমাগত। কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন এমন বললেও, তারা এই অপরাধ এড়িয়ে যান প্রায়ই। ফলে যেই তিমিরে রয়েছে বিমান সেই তিমিরেই থেকে যায়। জনসাধারণের দাবি, যাত্রীদের সম্পদ হারিয়ে কান্না, দেশের ক্ষতি করে সুমনরা আর কত অবৈধ সম্পদ করবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ